আন্তঃস্কুল ও মাদ্রাসা ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় নিক্ষেপ বিভাগে গোলক, বর্শা ও চাকতি এই তিনটি প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। এই তিনটি ইভেন্টের নিয়মাবলি ও কলাকৌশল বর্ণনা করা হলো-
১. গোলক নিক্ষেপ : গোলকটি লোহা, পিতল বা ঐ জাতীয় কোনো বস্তু দ্বারা তৈরি হবে। আকৃতি গোলাকার এবং মসৃণ হবে । গোলকের ওজন পুরুষদের জন্য ৭.২৬০ কেজি। মহিলাদের জন্য ৪ কেজি। শট পুট সার্কেলের ব্যাস হবে ২.১৩৫ মি। সেক্টরের কোণ হবে ৩৪.৯২°। একটি বাঁকানো কাঠের তৈরি স্টপ বোর্ড বৃত্তের সামনের দাগের উপর বসাতে হবে। স্টপ বোর্ডটি সাদা রঙের হবে এবং মাটিতে দৃঢ়ভাবে লাগানো থাকবে। পায়ের ধাক্কা লেগে যেন সরে না যায়।
গোলক নিক্ষেপের কৌশল : গোলকটি হাতের তালুতে না ধরে আঙ্গুলের গোড়াসহ সম্পূর্ণ আঙ্গুলের মধ্যে থাকবে। বুড়ো আঙ্গুল ও কনিষ্ঠ আঙ্গুল গোলকের দুইদিকে একটু ছড়িয়ে থাকবে যাতে পড়ে না যায়। এরপর গোলকটি গলা ও কাঁধের মাঝখানে রাখতে হবে এবং হাতের কনুই কিছুটা উঁচুতে থাকবে। যে দিকে গোলকটি ছোড়া হবে তার বিপরীত দিকে মুখ করে দাঁড়াতে হবে। ডান পা সামনে ও বাম পায়ের পাতাকে পিছনে নিয়ে ডান পায়ের গোড়ালির কাছে রাখতে হবে। এরপর পাসহ শরীরকে পিছনে টেনে এনে শরীর পাশে ঘুরে আসবে।
নিয়মাবলি
১. গোলকটি সেক্টরের মধ্যে নিক্ষেপ করতে হবে।
২. আটজন প্রতিযোগী হলে সবাই ৬টি করে নিক্ষেপ করার সুযোগ পাবে।
৩. আটের অধিক হলে প্রথমে ৩টি করে নিক্ষেপ করে বাছাই করতে হবে। বাছাইকৃত প্রতিযোগীগণ আরও তিনটি করে নিক্ষেপ করার সুযোগ পাবে।
৪. নিক্ষেপ শেষে বৃত্তের উপরে স্পর্শ করা যাবে না।
৫. গোলকটি মাটিতে না পড়া পর্যন্ত বৃত্ত থেকে বের হওয়া যাবে না ।
৬. নাম ডাকার ৬০ সেকেন্ডের ভিতর নিক্ষেপ করতে হবে।
২. বর্শা নিক্ষেপ : বর্শা নিক্ষেপের ইংরেজি হলো জ্যাভেলিন থ্রো। বর্শার দৈর্ঘ্য পুরুষের জন্য ২.৬০ - ২.৭০ মিটার এবং মহিলাদের জন্য ২.২০ - ২.৩০ মিটার। বর্ণার ওজন পুরুষদের ৮০০ গ্রাম, মহিলাদের ৬০০ গ্রাম । রানওয়ে কমপক্ষে ৩৩.৫ মিঃ হবে। ৮ মি : লম্বা ও ৪ মি চওড়া একটি বৃত্তচাপ অঙ্কন করতে হবে। আর্কটি একটি কাঠ ধাতুর তৈরি বস্তু দ্বারা মাটির সমান্তরালে স্থাপন করতে হবে। দুপাশে ৭৫ মি বাড়ানো থাকবে।
বর্গা নিক্ষেপের কৌশল : প্রথমে জ্যাভেলিন ধরা শিখতে হবে। কারণ ধরা ভালো হলে ছোড়াও ভালো হবে। ধরা তিন প্রকার-
ক. সামনের আঙ্গুল দিয়ে ধরা (Fore finger grip) : বর্শাটি সামনের আঙ্গুল দিয়ে চেপে ধরতে হয় ।
খ. মধ্যম আঙ্গুল দিয়ে ধরা (Middle finger grip) : মাঝের আঙ্গুল দিয়ে চেপে ধরা । গ. মধ্যম ও সামনের আঙ্গুলের মাঝখান দিয়ে ধরা (In between fore and middle finger ) : সামনের আঙ্গুল ও মাঝের আঙ্গুলের মাঝখানে দিয়ে ধরা।
বহন করা : রানওয়ে দিয়ে দৌড়ে আসার সময় তিনভাবে জ্যাভেলিন বহন করা যায় ১. কাঁধের নিচ দিয়ে, ২. কাঁধের উপর দিয়ে, ৩. মাথা বরাবর। যার যেভাবে সুবিধা মনে হবে সে সেভাবে জ্যাভেলিন বহন করতে পারে। তবে উঁচু করে বহন করলে সুবিধা হয়।
বর্শা নিক্ষেপ : বর্শা নিক্ষেপের সময় ৪টি ধাপ (Phase) অতিক্রম করতে হয়।
১. দৌড়ে আসা, ২. পাঁচ স্টেপের রিদম, ৩. নিক্ষেপ, ৪. পূর্বের অবস্থায় ফেরা
১. দৌঁড়ে আসা : বর্শা ধরে ছোড়ার জন্য রানওয়ে দিয়ে দৌঁড়ে আসা।
২. পাঁচ স্টেপের রিদম : ছোড়ার আগে রিদমের সাথে পাঁচটি পদক্ষেপ নিয়ে বর্ণাটি নিক্ষেপ করতে হয়।
৩. নিক্ষেপ : ৫টি পদক্ষেপ নিয়ে বর্শা ছুড়ে ভারসাম্য রক্ষা করতে হয়।
৪. পূর্বের অবস্থায় ফেরা (Recovery) : ভারসাম্য রক্ষার পর পূর্বের অবস্থায় ফিরে আসতে হয়।
বর্শা নিক্ষেপের নিয়মাবলি
১. বর্ণাটি সেক্টরের মধ্যে পড়তে হবে এবং মাথা প্রথমে মাটি স্পর্শ করবে।
২. বর্শা মার্কার স্পর্শ করে বা সামনের দাগ স্পর্শ করে নিক্ষেপ করা যাবে না ।
৩. নিক্ষেপের পর পাশের বাড়ানো রেখা অতিক্রম করা যাবে না।
৪. নাম ডাকার ৬০ সেকেন্ডের ভিতর নিক্ষেপ করতে হবে।
৫. টেপ দ্বারা দুই আঙ্গুলে পেঁচানো যাবে না ৷
৬. হাতে দস্তানা বা গ্লাভস ব্যবহার করা যাবে না।
৭. শক্ত করে ধরার জন্য হাতে পাউডার জাতীয় পদার্থ ব্যবহার করা যাবে ।
৩. চাকতি নিক্ষেপ : চাকতি নিক্ষেপ একটি জনপ্রিয় ফিল্ড ইভেন্ট। ডিসকাস বা চাকতি হলো গোলাকার একটি চাকতি। পুরুষদের জন্য চাকতির ওজন ২ কেজি এবং মহিলাদের জন্য এর ওজন ১ কেজি। চাকতি নিক্ষেপের সার্কেলের ব্যাস ২.৫ মিটার। বৃত্তের চারদিকে লোহার রিং মাটিতে বসানো থাকবে। বৃত্তটি কংক্রিটের ও খসখসে হবে।
চাকতি নিক্ষেপের কৌশল
ক. চাকতি ধরা
১. প্রথমে বিপরীত হাতে চাকতিটি রাখতে হবে।
২. মসৃণ পিঠ উপরে থাকবে।
৩. যে হাতে নিক্ষেপ করা হবে সে হাতের মধ্যের তিন আঙ্গুনের প্রথম ভাঁজে ডিসকাসকে আঁকড়িয়ে ধরতে হবে।
৪. বৃদ্ধ ও কনিষ্ঠ আঙ্গুলের সাহায্যে সাপোর্ট নিতে হবে।
৫. আঙ্গুলগুলো ফাঁকা করে রাখতে হবে।
চাকতি নিক্ষেপের ধাপসমূহ
চাকতি নিক্ষেপের ধাপ তিনটি। ১. সুইং, ২. টার্ন, ৩. নিক্ষেপ
চাকতির সার্কেল ও সেক্টর
১. সুইং : বৃত্তের ভিতর দাঁড়িয়ে চাকতিটি শক্তভাবে ধরে নিক্ষেপকারীর সুবিধা মতো সুইং দিবে।
২. টার্ন : ছোড়ার পূর্ব মুহূর্তে ১.১/২ পাক ঘুরে চাকতিটি ছুড়বে।
৩. নিক্ষেপ : ঘোরার সাথে সাথে পায়ের উপর ভর করে নিক্ষেপ করতে হয়। নিক্ষেপের পর এক পায়ের উপর শরীরের ভারসাম্য রাখতে হয়।
নিয়মাবলি
১. নাম ডাকার ৬০ সেকেন্ডের ভিতর নিক্ষেপ করতে হবে।
২. বৃত্তের মধ্যে থেকে চাকতি নিক্ষেপ করতে হবে। ৩. নিক্ষেপের পর পিছনের অংশ দিয়ে বের হতে হবে।
৪. চাকতিটি সেক্টরের মধ্যে পড়তে হবে।
৫. চাকতিটি শূন্যে থাকা অবস্থায় বৃত্ত থেকে বের হওয়া যাবে না।
৬. সার্কেলের চতুর্দিকের লোহার রিং এর উপরে স্পর্শ করা যাবে না।
৭. নিক্ষেপের সময় বৃত্তের বাইরের ভূমি স্পর্শ করা যাবে না।
আরও দেখুন...